অপারেশন সার্চ লাইট: পাকিস্তান বাহিনীর বাঙালি হত্যার বর্ণমালা

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর পাকিস্তান দখলদারগণ বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দেবে না বলে যে পণ করেছিল তারই ধারাবাহিক পরিণতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। নানা টালবাহানার এক পর্যায়ে যখন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে তার নীতি নির্ধারণী ভাষণ দেন, তারপর থেকেই মূলত বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এর মাঝে পাকিস্তানি জান্তারা বাঙালিদের উপর অতর্কিতে আঘাত হানার জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের সংলাপের আড়ালে বাংলাদেশে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। রাষ্টপ্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান থেকে শুরু করে ধূর্ত জুলফিকার আলী ভুট্টো পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিই বাঙালিরদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে।
অবশেষে তারা ২৫ মার্চ গভীর রাতে নিরীহ বাঙালিদের উপর ঝাঁপিড়েয় পড়ে। তবে সামরিক জান্তারা এই অপারেশনের সিদ্ধান্তটি নিয়ে ছিল তারও প্রায় এক মাস আগে ২২ ফেব্রুয়ারি। ১৭ মার্চ তারিখে পাঁচ পৃষ্ঠার এই অপারেশন প্লানটি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজ হাতে লিপিব্ধ করেন। মার্চের ২৪ ও ২৫ তারিখ পর্যন্ত কয়েকজন জেনারেল পূর্ব পাক্সিতানের সেনাবিবাসগুলোতে ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করে খামবদ্ধ অপারেশন প্লানগুলো সেনানিবাসের জেনারেল কমান্ডিং অফিসারদের হাতে দিয়ে আসেন।
সারা দেশের বড় বড় শহরগুলোতে পরিচালিত এই অপারেশনটির ঢাকার নেতৃত্ব দেন জেনারেল রাওফরমান আলী নিজেই। অন্যান্যা স্থানে নেতৃত্ব দেন জেনারেল খাদিম
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর পাকিস্তান দখলদারগণ বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দেবে না বলে যে পণ করেছিল তারই ধারাবাহিক পরিণতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। নানা টালবাহানার এক পর্যায়ে যখন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে তার নীতি নির্ধারণী ভাষণ দেন, তারপর থেকেই মূলত বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এর মাঝে পাকিস্তানি জান্তারা বাঙালিদের উপর অতর্কিতে আঘাত হানার জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের সংলাপের আড়ালে বাংলাদেশে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। রাষ্টপ্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান থেকে শুরু করে ধূর্ত জুলফিকার আলী ভুট্টো পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিই বাঙালিদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে।
অবশেষে তারা ২৫ মার্চ গভীর রাতে নিরীহ বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে সামরিক জান্তারা এই অপারেশনের সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল তারও প্রায় এক মাস আগে ২২ ফেব্রুয়ারি। ১৭ মার্চ তারিখে পাঁচ পৃষ্ঠার এই অপারেশন প্লানটি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেন। মার্চের ২৪ ও ২৫ তারিখ পর্যন্ত কয়েকজন জেনারেলের পূর্ব পাকিস্তানের সেনানিবাসগুলোতে ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করে খামবদ্ধ অপারেশন প্লানগুলো সেনানিবাসের জেনারেল কমান্ডিং অফিসারদের হাতে দিয়ে আসেন।
সারা দেশের বড় বড় শহরগুলোতে পরিচালিত এই অপারেশনটির ঢাকার নেতৃত্ব দেন জেনারেল রাওফরমান আলী নিজেই। অন্যান্য স্থানে নেতৃত্ব দেন জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও জেনারেল টিক্কা খান। রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান অপারেশন শুরুর আগেই গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু ঢাকায় রেখে যান তার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন বিশ্বাসভাজন জেনারেল যারা বাঙালি নিধনের এই অপারেশনে কাজের তদারক করতেন।
ঐ রাতে ঢাকায় থেকে গিয়েছিল আইয়ুবের অঘোষিত উপদেষ্টা জুলফিকার আলী ভুট্টো । আইয়ুব নিজেকে এই ভুট্টোর কূটবুদ্ধির কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে বাঙালি নিধনে রাজি হয়েছিল। ভুট্টো ২৬ মার্চ বিধ্বস্ত ঢাকার উপর দিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু এই ধূর্ত রাজনীতিবিদের কথা কতটা মিথ্যা ছিল তা মাত্র নয় মাসেই আমাদের বীর বাঙালি প্রমাণ করে দিয়েছিল।
অপারেশনে শহীদ হওয়া অধিকাংশ মানুষ নীরিহ ও নিম্ন আয়ের হলেও তাদের মূল টার্গেট ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও দলীয় কর্মীগণ। রাত একটায় মূল অপারেশন শুরুর সময় থাকলেও ঢাকা সেনানিবাস থেকে ঘাতকগণ রওয়ানা হয় রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে। তবে সেনানিবাস থেকে বের হয়েই তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ে রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকায়। তাদের নির্বিচারে গুলির খবর পুলিশের টহল টিম রাজার বাগ পুলিশ লাইন্সের বেতার বেইজে প্রেরণ করলে রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরাও প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
রাত বারটার দিকে তারা ধানম্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলেরর গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীগণ তাদের অপারেশন শুরুর আগেই আত্মগোপনে চলে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়ে তাদের সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের উপর। তাই তারা নির্বিচারে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। এমনকি রাস্তার পাশের ছিন্নমূল মানুষগুলোকেও বাদ দেয়নি।
২৫ এ মার্চের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা বড় বড় শহরগুলোতে গণহত্যা চালিয়ে নিস্তব্ধ করে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছোট ছোট শহরগুলোতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রায় সকল মফস্বল শহরেই পাকিস্তানি হায়েনারা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সব খানেই তারা দারুন প্রতিরোধের সমুক্ষীন হয়। পাবনা জেলায় রাজশাহী থেকে আসা একটি কোম্পানী প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কুষ্টিয়া জেলায় অপারেশন করতে যাওয়া কয়েকটি সেনা কোম্পানী মেজর আবু ওসমানের পরিকল্পনায় ধ্বংস হয়ে যায়।
এ দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যুদ্ধরত প্রায় ১৭০ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। অন্যনা আহত ও বন্দী হয়ে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রাজারবাগেই পাক বাহিনীর হেফাজতে থাকে। পরে তাদেরকে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার এই চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাদের অনেকই নিয়মিত মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ৩৩ হাজার ৯৯৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে এক হাজার একশ জনেরও বেশি শহীদ হন।
২৫ মার্চ কাল রাতের অপারেশন শুরুর পূর্বে পাকিস্তান জান্তা সরকার দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোকে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি ইত্তেফাক ও পত্রিকার অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় পলে সাংবাদিক কর্মচারীসহ সব কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঢাকা থেকে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করেন। তারপরও তিনজন মাত্র সাংবাদিক হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বর্তমানের সেরাটন হোটেলের বাথরুম স্টোররুমে লুকিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ২৯ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ডেটলাইন-ঢাকা নামের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তা থেকে জানা যায়, ঐ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল ইকবাল হলেই দুইশ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ঢাকায় মোট নিহত ছিল প্রায় সাত হাজার নিরীহ মানুষ।
পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ চলে দীর্ঘ নয় মাস। এর মাঝে বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, কামার-কুমার-জেলে-নাপিত, ব্যবসায়ী-শিক্ষক-কামলা-বেকার সকল শ্রেণির মানুষ যার যে অবস্থান থেকেই প্রতিরোধ করে হানাদারদের। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন জনাব তাজ উদ্দিন আহমদ। মুক্তিবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ বাহিনী যার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, কর্নেল এম এ জি ওসমানী। প্রতিবেশি ভারত সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় অবশেষে গঠিত মিত্রবাহিনীর হাতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন হানাদার বাহিনীর সেনাপতি জেনারেল একে নিয়াজি। বিশ্বের বুকে স্থান করে নেয় আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
হোসেন রাজা ও জেনারেল টিক্কা খান। রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান অপারেশন শুরুর আগেই গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু ঢাকায় রেখে যান তার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন বিশ্বাসভাজন জেনারেল যারা বাঙালি নিধনের এই অপারেশনক কাজের তদারক করতেন।
ঐ রাতে ঢাকায় থেকে গিয়েছিল আইয়ুবের অঘোষিত উপদেষ্টা জুলফিকার আলী ভুটোটা। আইয়ুব নিজেকে এই ভুট্টোর কূটবুদ্ধির কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে বাঙালি নিধনে রাজি হয়েছিল। ভুটেটা ২৬ মার্চ বিধ্বস্ত ঢাকার উপর দিয়ে বিমানবনএদর উপ্সিথত হন। সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু এই ধূর্ত রাজনীতিবিদের কথা কতটা মিথ্যা ছিল তা মাত্র নয় মাসেই আমাদের বীর বাঙালি প্রমাণ করে দিয়েছিল।
অপারেশনে শহীদ হওয়া অধিকাংশ মানুষ নীরিহ ও নিম্ন আয়ের হলেও তাদের মূল টার্গেট ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও দলীয় কর্মগণ। রাত একটায় মূল অপারেশন শুরুর সময় থাকলেও ঢাকা সেনানিবাস থেকে ঘাতকগণ রওয়ানা হয় রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে। তবে সেনানিবাস থেকে বের হয়েই তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ে রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকায়। তাদের নির্বিচারে গুলির খবর পুলিশের টহল টিম রাজার বাগ পুলিশ লাইন্সের বেতার বেইজে প্রেরণ করলে রাজাাবাগের পুলিশ সদস্যরাও প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
রাত বারটার দিকে তারা ধানম্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলেরর গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীগণ তাদের অপারেশন শুরুর আগেই আত্মগোপনে চলে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়ে তারেদ সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের উপর। তাই তারা নির্বিচারে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। এমনকি রাস্তার পাশের ছিন্নমূল মানুষগুলোকেও বাদ দেয়নি।
২৫ এ মার্চের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা বড় বড় শহরগুলোতে গণহত্যা চালিয়ে নিস্তব্ধ করে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছোট ছোট শহরগুলোতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রায় সকল মফসাল শহরেই পাকিস্তানি হায়েনারা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সব খানেই তারা দারুন প্রতিরোধের সমুক্ষীন হয়। পাবনা জেলায় রাজশাহী থেকে আসা একটি কোম্পানী প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কুষ্টিয়া জেলায় অপারেশন করতে যাওয়া কয়েকটি সেনা বোম্পানী মেজর আবু ওসমানের পরিকল্পনায় ধ্বংস হয়ে যায়।
এ দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যুদ্ধরত প্রায় ১৭০ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। অন্যনা আহত ও বন্দী হয়ে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রাজারবাগেই পাক বাহিনীর হেফাজতে থাকে। পরে তাদেরকে ঢাকা জেরার পুলিশ সুপার এই চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাদের অনেকই নিয়মিত মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ৩৩ হাজার ৯৯৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৪ হাজার পুলিশ সসদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে এক হাজার একশ জনেরও বশি শহীদ হন।
২৫ মার্চ কাল রাতের অপারেশন শুরুর পূর্বে পাকিস্তান জান্তা সরকার দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোকে দারুনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি ইত্তেফাক ও পত্রিকার অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় পলে সাংবাদিক কর্মচারীসহ সব কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়ে। ঢাকা থেকে সকল বিদেশী সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করেন। তারপরও তিনজন মাত্র সাংবাদিক হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বর্তমানের সেরাটন হোটেলের বাথরুম স্টোররুমে লুকিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ২৯ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ডেটলাইন-ঢাকা নামের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তা থেকে জানা যায়, ঐ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল ইকবাল হলেই দুইশ জন ছাত্রকেহত্যা কারা হয়েছিল এবং ঢাকায় মোট নিহত ছিল প্রায় সাত হাজার নিরীহ মানুষ।
পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ চলে দীর্ঘ নয় মাস। এর মাঝে বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, কামার-কুমার-জেলে-নাপিত, ব্যবসায়ী-শিক্ষক-কামলা-বেকার সকল শ্রেণির মানুষ যার যে অবস্থান থেকেই প্রতিরোধ করে হানাদারদের। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন জনাব তাজ উদ্দিন আহমদ। মুক্তিবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিতহয় বাংলাদেশ বাহিনী যার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, কর্নেল এম এ জি ওসমানী। প্রতিবেশি ভারত সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় অবশেষে গঠিত মিত্রবাহিনীর হাতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন হানাদার বাহিনীর সেনাপতি জেনারেল একে নিয়াজি। বিশ্বের বুকে স্থান করে নেয় আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।