ভাওয়াইয়া সাধক আব্বাসউদ্দিন আহমেদ

Oct 24, 2024 - 19:15
Oct 24, 2024 - 18:52
 1  10
ভাওয়াইয়া সাধক আব্বাসউদ্দিন আহমেদ

 বাংলাদেশের লোকগীতি ভাণ্ডার অলংকৃত করা অদ্বিতীয় পুরুষ আব্বাস উদ্দিন এ ধরাকে আলোকিত করতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন ১৯০১ সালের ২৭ শে অক্টোবর। তিনি সংগীতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের জনক ও বটে এবং তার কনিষ্ঠপুত্র সঙ্গীত অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ প্রাপ্তি একুশে পদক লাভ করেছেন। 

 পল্লী গায়ের সাধারণ সংস্কৃত মনা ও কৌতূহলী এই গায়কের সংগীত বিষয়ক কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।  তবুও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তার দেশ জুড়ে খ্যাতি রয়েছে।  এটি বলা ভুল হবে না যে বাংলা মুসলিম সংস্কৃতিকে  তথ্যসমৃদ্ধ করতে তার রচিত লোকসাহিত্য ও পল্লীগীতি  বিষয়ে তিনি পথিকৃৎ এর ভূমিকা পালন করেছিলেন।  স্কুল-কলেজে গানের আসর, থিয়েটারের সংস্কৃতি আয়োজন সমূহ থেকে তিনি গানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করেন এবং এর প্রতি পুরোপুরি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। নিজের প্রবল আগ্রহ ও স্বতন্ত্র অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি সংগীতকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে সক্ষম হন।। আব্বাস উদ্দীন একাধারে আধুনিক গান, ইসলামী গান ও পল্লীগীতি দক্ষ ছিলেন। তবে গ্রাম বাংলার পল্লীগীতিতে তার সর্বাধিক সুখ্যাতি  ছিল। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, খিরল, চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দিন বিপুল সুনাম অর্জন করেন। এছাড়া দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দিয়ে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, বিচ্ছেদী , মরশিয়া, পালা গান ইত্যাদি গেয়ে সার্বিক পরিচিতি লাভ করেন। 

  গানের মানিক-জোর জুটি কবি কাজী নজরুল ও আব্বাস উদ্দিন প্রায় বিশ বছর একত্রে সঙ্গীত অঙ্গনে জড়িত ছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের গাওয়া ও ‘মোর রমজানের এই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- গানটি প্রথম তার কন্ঠে ধ্বনিত হয় এবং মুসলিম  বাংলায় ধর্মীয় সংগীতে সূচনা ঘটে। এছাড়াও জনপ্রিয় নশিদ ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’- ইত্যাদি সমগ্র মুসলিম বাঙালি চেতনাকে আন্দোলিত করে তোলে। এবং তার ব্যাপক জনপ্রিয় পল্লী ও ভাওয়াইয়া গান - বাওকুমটা বাতাস যেমন,  নাও ছাড়িয়া দে,  মাঝি বাইয়া যাও, ঐ শোন কদম্বতলে, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে- ইত্যাদি  পল্লী বাংলার নিত্য বিনোদনের সঙ্গী ছিল। 

 কবি নজরুল ইসলামের স্নেহভাজন আব্বাস উদ্দিন, জসীমউদ্দীন ও গোলাম মোস্তফার ইসলামী ধারার রচিত গানেও কন্ঠ প্রদান করেছিলেন। আব্বাস উদ্দিন বাংলার প্রথম মুসলিম গায়ক যিনি সর্বপ্রথম মুসলিম নামের পরিচয়ে গানের রেকর্ড (গ্রামোফোন) বাণিজ্যিকভাবে প্রচার করেন ও প্রভূত সফলতা অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’- নামক আত্মজীবনীমূলক  গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এগুণী শিল্পী চিরনিদ্রায় সাহিত্য হন। তার মৃত্যুর পর ১৯৬০ সালে তাকে ‘প্রাইড অফ পারফরম্যান্স’ পুরস্কার সহ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলার সংস্কৃতি ও সংগীত অঙ্গনকে দীপ্ত করা এই গুণী শিল্পীর একশত তেইশতম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। 


Farhana Parvin Farhana Parvin is a Teacher of APBN Public School & College, Bogura. (ICT), Master Trainer of Digital Technology. Belong Science background, Also trained as a Graphics Designer as well.