মহান আল্লাহর ভালোবাসা সীমাহীন
(এক) আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তাআলা রহমত সৃষ্টির দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। নিরানব্বইটি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভ থেকে নিরাশ হবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে শাস্তি সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে বে-পরওয়া হবে না।[1]
(দুই) একদা রাসূলুল্লাহ (সা) একটি গাছের নীচে কম্বলের উপর বসা ছিলেন এবং তাঁর সাহাবীরাও চারদিকে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন সেখানে কম্বল পরিহিত জনৈক ব্যক্তি হাযির হয়, যার হাতে কিছু জিনিস ছিল। তখন সে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে দেখার পর যখন আপনার নিকট আসছিলাম, তখন পথিমধ্যে একটা ঝোপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তখন সেখানে আমি চড়ুই পাখির বাচ্চার কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাই, যাদের ধরে আমি আমার কম্বলের মাঝে রাখি। এ সময় এদের মা এসে আমার মাথার উপর ঘুরতে থাকে। তখন আমি বাচ্চাদের উপর হতে কম্বল সরিয়ে নিলে তৎক্ষণাৎ চড়ুই পাখিটি তার বাচ্চাদের উপর আছড়ে পড়ে। ফলে আমি এদের সকলকে আমার কম্বলের মাঝে জড়িয়ে ফেলি। তখন তিনি বলেনঃ তুমি ওদের এখানে রেখে দাও। তখন আমি ওদের সেখানে রেখে দেই, কিন্তু সে সময়ও ওদের মা বাচ্চার কাছেই ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা কি চড়ুই পাখিটির তার শাবকের প্রতি ভালোবাসা দেখে বিস্মিত হয়েছ? তখন তারা বলেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ “ফা ওয়াল্লাযী বাআ‘ছানী বিল হাক্কি, আল্লাহু আরহামু বি ইবাদিহি মিন উম্মিল আফরাজি বি ফিরা-খিহা” অর্থ: ঐ যাতের শপথ! যিনি আমাকে সত্য নবী হিসাবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের উপর এর চাইতেও বেশী স্নেহশীল, যতটুকু এ পাখি তার বাচ্চাদের প্রতি স্নেহপ্রবণ। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) লোকটিকে বলেন, তুমি এদের সেখানে রেখে এসো, যেখান থেকে তাদের নিয়ে এসেছ এবং ওদের মাতাকেও রেখে এসো। এরপর লোকটি (বাচ্চাগুলিকে) তাদের বাসায় ফেরত দিয়ে আসেন।[2]
(তিন) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী (সা) এর নিকট কতকগুলো (যুদ্ধ) বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল। (দুধপোষ্য বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ায়) তার স্তন ছিল দুধে পূর্ণ। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে কোলে তুলে নিত এবং দুধ পান করাত।(এক পর্যায়ে নিজের হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাকে খুঁজে পায় এবং বুকে নিয়ে দুধ পান করাতে থাকে) তখন নবী (সা) আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ “আল্লাহু আরহামু বি ইবাদিহি মিন হাজিহি বি ওয়ালাদিহা” অর্থ: এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তার চেয়েও বেশি দয়ালু।[3]
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা সীমাহীন। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে চাই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর যথাযথ অনুসরন। পবিত্র কুরআনে এসেছে, قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ (উচ্চারণ: ক্বুল ইন কুংতুম তুহিব্বূনাল্লাহা ফাত্তাবিঊনী ইউহ্ বিব কুমুল্লাহু, ওয়া ইয়াগ্ ফির লাকুম যুনূবাকুম, ওয়াল্লাহু গাফূরুর রহীম) অর্থ: বলুন হে নবী! তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যান্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[4]
আমরা মহান আল্লাহর সেই ভালোবাসা প্রত্যাশা করি আর বেশি করে দোআ করি। যেমনটা হাদিসে এসেছে, আবূদ দারদা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ দাউদ (আ)-এর দু’আসমূহের একটি হল এই যে, তিনি বলতেনঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ (উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা ওয়া হুব্বা মাই ইয়ুহিব্বুকা ওয়াল আ‘মালাল্লাজি ইয়ুবাল্লিগুনী হুব্বাকা; আল্লাহুম্মাজ্ আ‘ল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়্যা মিন নাফসী ওয়া আহলী ওয়া মিনাল মা-য়িল বারিদি)। অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার ভালোবাসা এবং যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা প্রার্থনা করি এবং এমন আমল করার সামর্থ্য চাই যা তোমার ভালোবাসা লাভ করা পর্যন্ত পৌছে দিবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসাকে আমার নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ও ঠান্ডা পানির চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও।” [5] আমীন।
[1] সহিহ বুখারি হাদিস নং ৫৪৬১, সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৬৪৬৯
[2] সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩০৭৭, হাদিসটি যঈফ।
[3] সহিহ বুখারি হাদিস নং ৫৪৬০, সহিহ মুসলিম হাদিস নং ২৭৫৪।
[4] সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৩১
[5] সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ৩৪৯০, হাদিসটি হাসান, গারীব।