আধুনিক উপনিবেশ: তথ্য চুরি ও মনস্তাত্ত্বিক দখলদারিত্ব
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, চিন্তাভাবনা ও গোপনীয়তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, যা আধুনিক পশ্চিমা উপনিবেশবাদের এক রূপ❞।
একটা মজার ব্যাপার কি জানেন? ঠিক মজার না, আতঙ্কেরও বটে। ভাবছেন, ঘাবড়াবেন না! আজকে আমি একটি গল্প বলব, যে গল্পটা আমাদের অধিকাংশের সাথেই মিলছে, এবং প্রতিনিয়ত তা ঘটে চলেছে। তাহলে গল্পটা শুরু করি:
প্রথমেই একটা প্রশ্ন করা যাক। আপনি কি কখনো চাইবেন, আপনার সিদ্ধান্ত, আপনার অনুভূতি, আপনার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, বা আপনার চিন্তাভাবনা কেউ নিয়ন্ত্রণ করুক? একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে, এর উত্তর অবশ্যই ‘না’ হওয়া উচিত। আমার ক্ষেত্রেও তাই, আমি কেন চাইবো যে, আমার অনুভূতি, আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং আমার চিন্তা-ভাবনা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করবে?
কিন্তু জানেন কি? আমি চাইলে বা না চাইলেও, প্রতিনিয়তই আমাদের চিন্তাভাবনা, দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনুভূতি সবকিছুই অন্য মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অবাক লাগছে? প্রথমে বলেছিলাম ঘাবড়াবেন না। আসুন, এসব ধোঁয়াশাময় মন্তব্যের খোলাসা করি।
আমরা সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করি, এবং এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা সামাজিক গণমাধ্যম যেমন ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করি। একটা জিনিস হয়তো সবাই লক্ষ্য করেছেন, যখন আমরা এসব মাধ্যম ব্যবহার করি, তখন আমরা অনেক সময় একেবারে ডুবে যাই এবং আশেপাশের কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারি না। এটা আমরা সবাই অনুভব করতে পারি। যারা এই বিষয়ে একটু বেশি জানেন, তারা হয়তো জানেন কেন এটা হয় এবং এর মধ্যে কী সাইকোলজি কাজ করে।
এগুলো আসলে এমন এক ধরনের প্ল্যাটফর্ম, যেগুলো আমাদের ইনফরমেশন বা তথ্যকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এটা শুধুই অ্যালগরিদমের খেলা, কিন্তু আসলে তথ্য ছাড়া এই অ্যালগরিদম কাজ করতে পারে না। যদি একটু গভীরভাবে দেখি, তাহলে আরও কিছু বিষয় পরিষ্কার হবে: আমাদের ব্যক্তিগত সব ধরনের তথ্য, এই টেক জায়েন্টগুলি আমাদের চোখের আড়ালে চুরি করছে, কিন্তু আমরা এ বিষয়ে এতটাই বেখেয়াল।
আমরা যদি সচেতনও হই, তারপরও আমাদের কিছু করার থাকে না, কারণ আমরা এই পশ্চিমা টেক জায়েন্টের তৈরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড়া কিছুই নই। এবং এই লেখাটি যেখান থেকে লিখছি, সেটিও একটি পশ্চিমা টেক জায়েন্টের প্ল্যাটফর্ম, “ফেসবুক"।
আমার এসব কথা বলার আসল কারণ, আমাদের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা কতটা ক্ষয়ে যাচ্ছে, সেটা তুলে ধরতে। এই টেক জায়েন্টগুলি আমাদের তথ্য চুরি করে ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে, এবং তারা একচেটিয়া হয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দমনে কেউ নেই!
আমরা বাঙালি উপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে এলেও, প্রযুক্তিগতভাবে এখনো পশ্চিমা উপনিবেশের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারিনি। আজও আমরা পশ্চিমা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।
আমার এই লেখাটি একটু অগোছালো হতে পারে, তবে এটির স্পৃহা এবং কনসেপ্ট আমি পেয়েছি একটি প্রতিবেদন থেকে, যা “The Daily Star” সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
শেষে, আমরা বলতে চাই, রাষ্ট্রগতভাবে আমাদের অনেক উন্নতি বাকি, এবং কখনোই আমরা উপনিবেশবাদ মেনে নেবো না।