কালো জলের উপাখ্যান
একটা লম্বা পীচ ঢালা পথের পূর্বপাশ ঘেঁষে একটা দীঘি। অনেকটা বড়ো পুকুরের মতো। পাশে আরও কয়েকটি ছোট ছোট পুকুর। গ্রীষ্মে পুকুরগুলোর জল শুকিয়ে গেলে ও দীঘির পানি কমে না।তাই মানুষের সাথে সারাবছরই দীঘির সুখের বন্ধন। মানুষ সাংসারিক নিত্য কাজে দীঘির মুখাপেক্ষী।দীঘিও মায়ায় বেঁধে রাখে তাদের।পাশের অন্য পুকুরগুলোর জল কোনোটির সবুজ, কোনটির সাদা, কোনোটির ঘোলা, কোনোটির লালচে হলেও দীঘিটির জলের রং গভীর কালো। অচেনা মানুষের কাছে এই কালো জলের অজানা রহস্যের জন্য দীঘিটি ভয়ঙ্করী। কিন্তু স্থানীয়দের এটি প্রাণ।রাস্তার পশ্চিম পাশে কয়েকটি বাড়ি, একটি ছোট্ট পাড়ার মতো। বাড়িগুলোর প্রান্ত ছুঁয়ে একটা বড় বিল,ফসলী মাঠ। বর্ষায় জলে ভরে আদিগন্ত চিকমিক করে।
রাস্তাঘেঁষা একটা বাড়ির ফর্সা,ঢিংঢিঙে কিশোরী বধূ মারুফা,যে কিনা পুতুলের সংসারের স্বপ্নে আজো বিভোর।তার মন পড়ে থাকে শ্যামল,উদাস মাঠে, কখনো মেঘের সাথে ওড়ে। আবার নিভৃতে জলের সাথে গভীর সখ্য। দীঘিটি তার সখী।সে সেই জলে ডুব দেয়,মাছ ধরে, সুখের জলকেলি করে। কখনো দুঃখ ধোয়। সুগন্ধি সাবানে চুল ধুয়ে স্বামীর জন্য শয্যা পাতে। গ্রীষ্মরাতে খোলা জানালা দিয়ে জলভেজা বাতাস টেনে নেয়।এই দীঘির নরম ঘাসে বসে স্বামী তাকে ভালোবাসার কথা বলে। নিজেকে নারী হিসেবে প্রথম অনুভব করে এখানে, স্বামীর সান্নিধ্যে।
একরাতে স্বামী তাকে বাইরে ডেকে নেয়।সে পথের কালোয় পা মেলে বসে।কাছেই দীঘির কালোজলে স্বামী জলখরচে যায়। অনেকটা সময়ে স্বামী ফিরে না আসায় সে নিশীথ জলের পাশে গিয়ে চিৎকার করে বলে, কোনটি গেলিন? নিজের ডাকই প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে কোনটি গেলিন? পাড়ার সমবেত মানুষ হারিকেন, টর্চ নিয়ে বের হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন কালো জলে ভেসে উঠে পুরুষ লাশ।কেউ কেউ বলে জলে দোষ আছে । জিন আছে। অভাগী মারুফা সে জলে তাকিয়ে বলে তুই হামার সখী না, তুই ডাইনী। হামার সতীন..। হামার স্বামীক কাড়ে নিলু?
আলুথালু শোকাগ্রস্থ মেয়েটির বিলাপজলে দীঘিটি আরও প্রসার হয়। ক্রমাগত জলপড়া আগুনরঙা লাল চোখ দুটিকে দেখে গ্রামবাসীরা ধরে নেয় মেয়েটিকে ও জিনে আঁচড় করেছে...