এপিবিএন পাবলিক  স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনায় আমার চৌদ্দমাস: কিছু স্মৃতিচারণ 

Nov 7, 2024 - 19:30
Nov 8, 2024 - 17:17
 3  673
 এপিবিএন পাবলিক  স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনায় আমার চৌদ্দমাস: কিছু স্মৃতিচারণ 
ছবি এঁকেছে- সামিয়া মালিহা, কলাবতি শাখা, সপ্তম শ্রেণি

চতুর্থ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বগুড়ার ব্যবস্থাধীন পরিচালিত পাবলিক স্কুল ও কলেজটি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোর অন্যতম। বগুড়া জেলা তো বটেই এমনকি রাজশাহী বোর্ডের অন্যান্য  প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে এর অবস্থান তালিকার প্রথম দিকে। প্রতিষ্ঠানটি  এমপিওভূক্ত হলেও এর শিক্ষকর্মচারীদের অধিকাংশই এমপিওভুক্ত নয়। তাই এর পরিচালনার প্রায় সকল ব্যয়ভার ছাত্রছাত্রীদের বেতন ও সেশন ফি থেকেই সংগ্রহ করা হয়। স্বায়ত্তশাসিত ক্যাটাগরি অন্তর্গত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতির দায়ভার পদাধিকার বলে  ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে পালন করতে হয়। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ভূমি বরাদ্দসহ ৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নানা প্রকার সহায়তা দিয়ে থাকে। তাই এর সুষ্ঠ  পরিচালনা ও উন্নয়ন ৪ এপিবিএনের অধিনায়কের আগ্রহ ও সক্ষমতার উপর নির্ভর করে।



আমি ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ভার গ্রহণ করি। শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতি আমার সহজাত আগ্রহ রয়েছে। এর মূল কারন আমার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মাধ্যমে । তাই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি যথাসাধ্য আন্তরিকতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছি।

 

 প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বড় সীমাবদ্ধতা ছিল এর অধ্যক্ষ। দীর্ঘ দিন  এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সত্ত্বেও  তার দক্ষতা ও পরিচালনায় স্বচ্ছতার ও আন্তরিকতার অভাব ছিল। তাই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সকল শিক্ষক কর্মচারীই তাকে অপছন্দ করত। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি ছিলেন পুরোপুরি উদাসীন। এমন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মরত হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন একেবারেই একজন গতানুগতিক ধারার দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিত্ব । তবে পূর্ববর্তী অধিনায়কগণ একজন এএসপিকে এর দেখাশোনার জন্য বিশেষভাবে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তাই এর প্রশাসন ও পরিচালনায় তেমন কোন ব্যত্যয় সাধিত হয়নি।। এএসপি নাহিদ হাসান অক্লান্ত পরিশ্রম করে অধ্যক্ষের অদক্ষতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে পাশ কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতির ধারা সমুন্নত রেখেছেন।

 

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কালার অব হিলস: আমার যোগদানের অল্প দিন পরেই প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কিন্তু আমি নবীন বরণ অনুষ্ঠানটিকে একটি ভিন্ন আমেজ দেওয়ার জন্য রাঙ্গামাটি থেকে একটি পাহাড়ি সাংস্কৃতিক গ্রুপকে নিয়ে এসেছিলাম। তারা চমৎকার নাচ পরিবেশন করে ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথিদের মুগ্ধ করেছিল। তবে দ্বিতীয়বার নবীন বরণ অনুষ্ঠানে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল না থাকায় স্থানীয়ভাবেই সাদামাটা ধরনের অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। 

 

সিফিএফ এর লভ্যাংশ: স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের একটি ভবিষ্যৎ তহবিল বা সিপিএফ রয়েছে, যেখানে শিক্ষকগণ প্রতি মাসে তাদের বেতনের দশ শতাংশ জমা রাখে এবং প্রতিষ্ঠান আরো  ১০% অনুদান দিয়ে থাকে। আমি লক্ষ করলাম এই সিপিএফ ফান্ড সরকারি কর্মচারীদের জিপিএফ ফান্ডের মত নয়। এখানে প্রতি মাসেই শিক্ষক কর্মচারীদের নামে খোলা সিপিএফ একাউন্টে অর্থ জমা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এই সঞ্চিত অর্থের উপর যে লভ্যাংশ দেয় তা একটি চলতি একাউন্ট পরিচালনার সমান। অথচ সরকারি কর্মচারীদের সিপিএফ ফান্ডের সঞ্চিত অর্থের বিপরীতে সরকার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত  লভ্যাংশ দেয় এবং তা চক্রবৃদ্ধি হারে একাউন্টে জমা হয়। স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের সঞ্চিত অর্থের উপর যে লভ্যাংশ দেওয়া হয় তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লাভবান হলেও শিক্ষক কর্মচারীদের কোন লাভ হয় না। এমতাবস্থায় আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে দেন দরবার করে সিপিএফ একাউন্ট গুলোর সঞ্চিত অর্থের বড় অংশটি ফিক্স ডিপোজিট আকারে জমা রেখেছি এতে শিক্ষক-কর্মচারীগণ যখন অবসরে যাবেন তখন একটি বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পাবেন। এই ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে একজন সিনিয়র শিক্ষক আমাদের বলেছিলেন ব্যবস্থাটা যদি প্রথম থেকেই গ্রহণ করা হতো তাহলে তিনি অবসরে যাওয়ার সময় অন্তত ৩০ লক্ষ টাকার অধিক সুবিধা পেতেন।

 

  শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন_ভাতা বৈষম্য দূরীকরণ: শিক্ষক কর্মচারীদের যোগদানের পর স্থায়ীকরণ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এবং টাইম স্কেল প্রাপ্তিতে যথেষ্ট বৈষম্য ছিল। অনেক শিক্ষক কর্মচারী তাদের জানাশোনা ও তথ্যের ঘাটতির জন্য এবং অধিকন্তু অধ্যক্ষের পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকদিন থেকে আর্থিকভাবে বৈষম্যের শিকার  হচ্ছিলেন। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দু'বছরের সন্তোষজনক চাকরির পর একজন শিক্ষককে স্থায়ী করার বিধান থাকলেও কর্তৃপক্ষ তিন বছরের পূর্বে কাউকে স্থায়ীকরণ করতেন না। এমনকি স্থায়ী করানোর ক্ষেত্রেও ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো। কেউ চাকরির তৃতীয় বছরে স্থায়ী হচ্ছেন, কারো কারো আবার চাকরির বয়স ৬-৭ বছর হওয়ার পরেও স্থায়ীকরণ হয় নাই। বেশ কিছু কর্মচারীর নিয়োগ পত্রে তথ্য মোতাবেক দু বছরের পর চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১৬ বছরেও তাকে স্থায়ী করা হয়নি। একজন বাস ড্রাইভারকে ১৯তম গ্রেডে চাকরিতে নিযুক্ত করা হলেও  স্থায়ীকরণের সময় নিয়মের বহির্ভূত হয়ে তাকে ২০ তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়। 

 

শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা পূর্বক তাদের মধ্যে বেতন ও স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত বৈষম্যের প্রায় সবটাই নিরসন করেছি। এখনো দু চারটি বিষয় অমিমাংসিত রয়ে গিয়েছে। আমি আশা করব পরবর্তী অধিনায়ক বিষয়গুলো আরো গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা পূর্বক শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য পুরোপুরি নিরসন করবেন। 



সাধারণ তহবিল থেকে পেনশন তহবিল আলাদাকরণ: স্কুলের সকল ফান্ডিং একটিমাত্র ফান্ডে জমা থাকে এতে ফান্ডে একটি বড় অঙ্কের টাকা প্রদর্শিত হয়। অথচ জেনারেল ফান্ডে যে টাকা জমা থাকে তাদের একটি বড় অংশ শিক্ষক কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ অবসর কালের পেনশন ও গ্রাচুইটির জন্য ব্যয় হওয়ার কথা। আবার সাধারণ তহবিলে একসঙ্গে বড় অংকের টাকা জমা থাকলে একদিকে যেমন ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ যেমন বেশি প্রদান করতে হয়,, অপরদিকে ট্যাক্সও বেশি দিতে হয়। আমরা তাই শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন ও আনুষঙ্গিক তহবিল কে সাধারণ তহবিল থেকে পৃথক  করা হয়েছে। 

 

জেনারেল ফান্ডের লাভজনক বিনিয়োগ: স্কুলের তহবিলের অর্থগুলো বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে সাধারণত ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিটের হার বিভিন্ন রকমের। গত বছর ব্যাংক সমূহের তারল্য সংকটের জন্য ডিপোজিটের বিপরীতে হার বেড়ে যায়। আমরা ডিপোজিটের হিসেবগুলো একত্রিত করে যেসব ব্যাংক অপেক্ষাকৃত কম লভ্যাংশ দিচ্ছিল তাদের সাথে দরকষাকষি করে কিংবা এক ব্যাংক থেকে ডিপোজিট সরিয়ে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরিত করে সর্বোচ্চ হারে মুনাফা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি। একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম সংঘটিত হচ্ছিল, পরিচালনা পর্ষদে আলোচনার মাধ্যমে সেখান থেকে সকল ডিপোজিট সরিয়ে নিরাপদ ব্যাংকগুলোতে নেয়া হয়েছে, ফলে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। 

 

প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি ক্রয়: পুলিশ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নের জন্য ইতোপূর্বে পুলিশ হেডকোয়ার্টস কর্তৃক যে কমিটি তৈরি হয়েছিল আমি তার অন্যতম সদস্য ছিলাম। সেখানে স্কুল সমূহের পরিচালনা সংক্রান্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল তার অন্যতম ছিল যে, আর্থিক সক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজস্ব ভূমি ক্রয় করা। স্কুল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আমি সেই বিষয়টি বাস্তবায়ন শুরু করি। তাছাড়া টাকার যে অবমূল্যায়ন হচ্ছে তাতে ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থে যতই লাভ দেওয়া হোক না কেন তা কোন এক সময় অব মূল্যায়নের হারের চেয়ে কম হবে অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা থাকবে কিন্তু সেই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলান সম্ভব হবে না। এমতাবস্থায় আমরা স্কুলের কাছাকাছি কিছু জমি ক্রয়ের চেষ্টা করি এবং স্কুল থেকে হাঁটা পথের দূরত্বে তেত্রিশ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমির অবস্থানের আশেপাশে ক্রয়যোগ্য আরো কিছু জমি আছে সেগুলো ক্রয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে স্কুলের জেনারেল ফান্ড ব্যবহার করে যত বেশি পরিমাণ সম্ভব জমি ক্রয় করে রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে একমাত্র বগুড়ার এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজেরই নিজস্ব ভূমি রয়েছে। 

 

কম্পিটেবল শিক্ষা সফটওয়্যার ও ব্যয় হ্রাস: বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সবগুলোই ডিজিটাল সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বেতন ভাতা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি কার্য পরিচালনা করে থাকে। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু অত্র প্রতিষ্ঠানে অ্যাপ্লিকেশনটি যাচ্ছেতাই অবস্থায় ছিল। প্রতিমাসে এর জন্য দেড় লক্ষ করে টাকা সার্ভিস চার্জ ব্যয় হলেও এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যত সামান্যই উপকার হতো। আমরা অ্যাপ্লিকেশনটির উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার কোম্পানিকে তাগাদা দিলেও তারা তা করতে অনীহা প্রকাশ করে, ফলে আমরা বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করি এবং একটি নির্ভরযোগ্য কোম্পানিকে এর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করি। ‘ঢাকা সফট’ নামে এই কোম্পানিটি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এবং কলেজ , রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ সহকারে বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান করছে। আমরা এই কোম্পানির সাথে চুক্তি করে যেসব সুবিধা অর্জন করেছি, তা স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি নবযুগের সূচনা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ এর ক্ষেত্রে আগে যেখানে মাসে দেড় লক্ষাধিক টাকা মাসে গুনতে হত, এখন তার চাইতেও অনেক উন্নত সুবিধা প্রাপ্ত হয়েও আমাদের মাসে কেবল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। 

আমাদের শিক্ষা সফটওয়ারটি সুরক্ষিত রাখার জন্য ইতিপূর্বে যে কোম্পানির কাছ থেকে আমরা সেবা গ্রহণ করতাম তার কাছ থেকে ইতোপূর্বেকার আমরা শিক্ষার্থী বা ফলাফল জনিত কোন তথ্যই পাইনি।  আমাদের   সকল প্রকার তথ্য সংরক্ষণ  ও তথ্য হ্যাকিং পরিহার করার নিমিত্তে আমরা  নিজস্ব সার্ভার ক্রয় করেছি। বর্তমান সফটওয়্যার সিস্টেমটি অত্যন্ত কমপিটেবল, প্রতিনিয়তই আমরা এখানে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি।

 

শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পরিচালিত স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীগণ অত্যন্ত মেধাবী। একাডেমিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তারা এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। একাডেমিক চমৎকার ফলাফলের পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীরা চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগিতা, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, সংগীত, বিতর্ক এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ছাত্র-ছাত্রীগণ বিভাগীয় পর্যায় সহ, জাতীয় পর্যায়েও পুরস্কার অর্জন করেছে।  এসব বিষয়কে আরো উৎসাহিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে রচনা প্রতিযোগিতা ও বিতর্ক ক্লাব ও প্রতিযোগিতার প্রচলন করেছি। প্রথমবারের মতো বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রত্যেক শাখা থেকে শুরু হয়ে শ্রেণি ও স্কুল পর্যায়ে প্রায় ৪০ টির মত দল অংশগ্রহণ করেছিল।

 

ফুটবল ও ভলিবল প্রতিযোগীতা: ক্রিড়াঙ্গনে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার বিষয়টি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনেক দিন পরে চলতি বছর প্রতিষ্ঠানে ক্রিড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সপ্তাহ ব্যাপী লীগ পদ্ধতিতে ছেলেদের ফুটবল প্রতিযোগীতা ও মেয়েদের ভলিবল প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে আয়োজন  করে পরবর্তীতে প্রাথমিকের শিশুদের জন্যও আয়োজন করা হয়েছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্রিড়া বিষয়ে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। প্রতি মাসে অন্তত একটি করে ফুটবল খেলা আয়োজনের সিধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যেন অদূর ভবিষ্যতে ক্রীড়াঙ্গনেও অত্র প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে  ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারে।

 

সাহিত্য ও সংস্কৃতি সঙ্ঘ: প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কার্যকরী পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা ছিল খুবই সীমিত। নৃত্যের জন্য প্রশিক্ষক এবং গানের জন্য আলাদা শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু অব্যাহত ভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনুশীলনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংঘ’ গঠন করা হয়েছে। সংঘের জন্য একটি গঠনতন্ত্রও অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতিমাসে সময় ও সুযোগ মত ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি সঙ্ঘ’ প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীগণ সংঘের সদস্য হবেন এবং তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সংগীতের জন্য একজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষিকা রয়েছে। নাচের প্রশিক্ষক হিসেবে একজন নারী প্রশিক্ষক দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে কর্মরত আছেন। তার বেতন সর্বসাকুল্যে সামান্যই ছিল। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রথমে তার বেতন বৃদ্ধি করা হয় এবং সর্বশেষ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শ্রেণিকক্ষে দক্ষতার ভিত্তিতে প্রাথমিক স্তরের সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল প্রদান করা হয়।

 

চারুকলা ও চিত্রাংকন: বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চিত্রাংকন বিষয়ে যথেষ্ট উদ্দীপনা ও দক্ষতা রয়েছে। ক্ষুদে চিত্রশিল্পীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করেছে। তাই এই দক্ষতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ‘সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্ঘর’ নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসাবে চিত্র প্রদর্শনীর(আর্ট এক্সিবিশন) আয়োজন করা হয়। একই সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল জার্নালে প্রদেয় লেখাসমূহের  জন্য ফিচার ছবি অঙ্কন করে।

 

এপিবিএন স্কুল জার্নাল(‘কাঙ্ক্ষিত প্রহর’):ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সাহিত্য অনুশীলন ও লেখনি মেধার বিস্ফোরণ ও একই সাথে ক্ষুদে চিত্রকর ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দানের জন্য একটি  অনলাইন জার্নাল চালু করা হয়েছে। জার্নালটির জন্য একটি আলাদা ডোমেন করায় পূর্বক নতুন আঙ্গিকে ওয়েব পেজ ডিজাইন করা হয়েছে। হ্যাকিং এর হাত থেকে রক্ষার জন্য জার্নালের সিকিউরিটি গ্যারান্টিও ক্রয় করা হয়েছে। জার্নালটি প্রতি বৃহস্পতিবার অপরাহ্ণে আপডেট করা হয়। গত প্রায় এক বছরে এ জার্নালটি অনলাইন সাইবার অঙ্গনে কিছুটা হলেও সাড়া ফেলেছে। জার্নালের কপিরাইট প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন থাকবে। সম্ভবত সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একমাত্র বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল ও কলেজেরই নিজস্ব একটি অনলাইন জার্নাল রয়েছে। জার্নালটিতে আমি নিয়মিত লেখা প্রদান করি এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি রইল। জার্নালটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে ভবিষ্যতে জার্নালের বিজ্ঞাপন দিয়েও অর্থ আয় করা সম্ভব। তখন লেখক ও সংশ্লিষ্টদের এই আয় থেকে সম্মানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে জার্নালটি সার্চ ইঞ্জিনে প্রথমের দিকে নিয়ে আসার জন্য বুস্টিংয়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে। 

 

মাল্টিমিডিয়া স্থাপন ও হোয়াইট বোর্ড পরিবর্তন: স্কুলের কিছু শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর থাকলেও অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর ছিল না। প্রশিক্ষকদের আধুনিক কৌশলে পাঠদানের সুবিধার্থে অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সংযোজন করা হয়েছে। হোয়াইট বোর্ডগুলির প্রায় সবই অতি পুরাতন হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো হয় মেরামত করা হয়েছে নয়তো নতুন বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

 

ক্লাস ক্যাপ্টেন ও হাউজ লিডার নির্বাচন নীতিমালা প্রণয়ন:  প্রতিটি শ্রেণিতেই একাধিক শাখা রয়েছে। প্রত্যেক শাখার জন্য একজন শাখা ক্যাপটেন ও দুইজন সহকারী শাখা ক্যাপটেন নির্বাচনের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ ও পুরাতন। তাই ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন বিষয়টিকে অধিকতর স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য বিশেষ নীতিমালা চালু করা হয়েছে। নীতিমালা অনুসারে সম্ভাব্য প্রতিযোগীরা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে তাদের প্রতিযোগিতার ইচ্ছা পোষণ করে আবেদন করবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিযোগীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অনলাইনে ভোটদানের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইসিটি বিভাগের শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী ক্যাপ্টেন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারী দুজন সহকারী ক্যাপ্টেন এর দায়িত্ব গ্রহণ করে। বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে ক্লাস ক্যাপ্টেন পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন দিনটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে।

অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড: স্কুলের ভবনে ইতিমধ্যে একটি লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই লিফটির স্থাপনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। স্কুলের ভবনের সিঁড়িগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, যেখানে উঠতে নামতে ছাত্র-ছাত্রীরা হোঁচট খেয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটত। তাই বহু বছর পর সিঁড়িগুলো সংস্কার করা হয়েছে। স্কুলের বেঞ্চ, টেবিল ইত্যাদির যেমন স্বল্পতা ছিল, তেমনি অনেক পুরাতন হয়ে পড়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের বসতে অসুবিধা হতো এবং পরীক্ষা দেওয়ার সময় খাতা ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হত। এমতাবস্থায় পুরাতন ডেক্সগুলো মেরামত করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বেঞ্চ ও ডেক্স তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষকদের কমনরুমে খাতা পত্র রাখার জন্য ফাইল কেবিনেট ও আলমিরা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সাউন্ড সিস্টেম উন্নত করার জন্য নতুন সাউন্ড সিস্টেম ক্রয় করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক দলের সুবিধার জন্য একটি প্রফেশনাল কিবোর্ড ও নতুন বাদ্যযন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে।


ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ: স্কুলের জন্য নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কর্তৃক অনুমতি না পাওয়ায়, বর্তমান দুইটি ভবনকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এর কার্যক্রম  শেষ পর্যায়ে রয়েছে।  আশা করা যায় ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ফলে স্কুলের শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের এক্সট্রা কারিকুলাম পরিচালনার জন্যও পর্যাপ্ত স্থানের সংকুলান হবে।

 

 

 অযোগ্য প্রিন্সিপালকে অবসর প্রদান: বিগত প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। কিন্তু আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়নি। গত ৫ই আগস্টের(২০২৪) পর তাকে অপসারণের চাপ থাকলেও তার সাথে নিগোসিয়েট করা হয় এবং  তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তাই তার কাছে আমাদের স্কুলের কোন পাওনা নেই। বরং তিনিই আমাদের কাছ থেকে পাবেন।

তার বিরুদ্ধে একজন সাইকোপ্যাথিক সাবেক ইন্সপেক্টর দরখাস্ত করেছেন, যা পুনরায় অনুসন্ধানের জন্য অতিরিক্ত ডিআইজি গিয়াসকে দিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে।  এই তদন্তের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ প্রাক্তন সেই  প্রিন্সিপালের কাছে আমাদের কোন পাওনা নেই।  তাই বিষয়টি মৃত।

 

দরিদ্র তহবিল ব্যবস্থাপনা:

ইতিপূর্বে স্কুলের সেশন ফি, ভর্তি ফি, মাসিক বেতন ইত্যাদি মওকুফ বা ফ্রি করার জন্য কোন নীতিমালা ছিল না।  যেই ব্যক্তি অধিনায়কের কাছে এসে যত বেশি আভিজাত্য প্রকাশ করতে পারতেন, তিনি তত বেশি এই সুবিধা ভোগ করতে পারতেন। পুলিশের উচ্চপদ থেকেও বেতন মওকুফের অনুরোধ আসে দরিদ্র তহবিল ব্যবস্থাপনা ও ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্যতা অনুসারে বেতন-সেসন ফি ছাড় প্রদানের জন্য। আমরা একটি নীতিমালা করেছি যা অনুসরণ করেই যাদের ফুল ফ্রি, হাফ ফ্রি বা অন্যান্য সুবিধা দিয়েছি সেগুলো দরিদ্র ফান্ডে প্রতি বছর কত টাকা জমা হচ্ছে সেই টাকার সামঞ্জস্য রেখে বিতরণ করা হয়। অনলাইনে দরখাস্ত নেয়া হয়। রীতিমত অনুসন্ধান করে ফ্রি করার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। নীতিমালা থাকার ফলে তদবির কমেছে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত আবদার উপেক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কনসেশনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের সেসন ফি দেয়ার পর অনলাইনে নির্ধারিত ডকুমেন্ট সংযোজন পূর্বক করে আবেদন করতে হয়। পরে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দরিদ্রদের মাঝে তহবিল বিতরণ করা হয়। নূতন সিস্টেম চালুর ফলে ইতোপূর্বে প্রভাব খাটিয়ে যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও  মাসিক বেতন বা সেশন ফি বাবদ কনসেসন নিতেন তারা বাদ পড়েছে কিংন্তু প্রকৃত দরিদ্ররা যোগ হয়েছে।

 

স্কুলে ভর্তি সংক্রান্ত: স্কুলে ভর্তির জন্য প্রচুর তদবির হয়। তাই এ ব্যাপারেও বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। তদবিরে ভর্তি ইচ্ছুকরা অধিনায়ক বরাবর আবেদন করলে সে আবেদন গ্রহণ করে তাদের নাম ঠিকানা ও তদবিরকারী ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে একটি এক্সএল ফাইল সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা নিবারণ করা সম্ভব হয়েছে।

 

 

অনলাইনে ভর্তি ও বেতন গ্রহণ: অনলাইনে ফি ও বেতন গ্রহণের জন্য ইউসিবি ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তির চেষ্টা চলছে। এতে যে সার্ভিস চার্জ সংগ্রহ করা হবে তা শেয়ারিং হলে প্রতি মাসে স্কুলের একটি বড় ইনকাম আসবে। প্রতি হাজারে পনের টাকা করে সার্ভিস চার্জ নেয়া হবে। এর শেয়ারিং পারসেন্টেজ হবে পুলিশের সাথে ই-প্রসিকিউশনের ক্ষেত্রে তারা যে হারে করে ঠিক তার অনুরূপ। তবে বড় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হবে। এই আয় থেকে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা  যেতে পারে।

স্কুল বাসের উন্নয়ন ও লাভজনক করণ: স্কুলের বাসগুলো অনেক দিন থেকে মেরামত করা হয়নি। অনেক বাস এত বেশি পুরাতন ছিল যে তা ওভারহোলিং করা খুব জরুরী হয়ে পড়েছিল। তবে বাসগুলোকে মেরামত, রংকরণ ও ওভারহোলিং করে যতদূর সম্ভব সচল করা হয়েছে। ইতোপূর্বে বাস পরিচালনা সংক্রান্তে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বেশি  জোরদার ছিল না। আমরা জানতে পারি যে বাসগুলো বরাবরই লোকসান দিচ্ছে এবং অনেক সময় ভর্তুকি দিয়ে চালানো হচ্ছে। আমরা বাস পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করি এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত কাজে কড়াকড়ি আরোপের ফলে বর্তমানে লোকসান গোনা বাসগুলোই প্রতি মাসেই প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লাভ করছে।




প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ:

অনেক দিন পূর্বে প্রতিষ্ঠানের বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের মূল্যস্ফিতি হওয়ায় এবং স্কুলের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সব স্তরেই বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য স্কুল ও কলেজ, বিশেষ করে রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ, রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, পার্শ্ববর্তী বিয়াম স্কুল ও কলেজ, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল কলেজ, বগুড়া মিলিনিয়াম স্কুল প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ও সেশন ফি পর্যালোচনা করে একটি মধ্যবর্তী হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। 

 

এ খাতের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির জন্য জরিমানা আরোপ। পূর্বেও বিষয়টি প্রচলন ছিল। কিন্তু জরিমানার পরিমাণ ছিল খুবই নগণ্য। তাছাড়া বিষয়টি ডিজিটালভাবে মনিটর করার সুবিধা না থাকায় এ খাতের যথেষ্ট দুর্বলতা ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষা সফটওয়্যার চালুর ফলে প্রতিমাসেই জরিমানা বাবদ একটি ভালো অংকের অর্থ প্রতিষ্ঠানের আয়ের খাতায় যোগ হচ্ছে। 

 

দ্বাদশ শ্রেণির জন্য মেন্টর শিক্ষক নিয়োগ: দ্বাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অধিকতর ভালো ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষককে ‘মেন্টর শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগের বিধান চালু করা হয়েছে।  মেন্টর  শিক্ষকগণ তাদের অধীনে ২০ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অগ্রগতি, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে নিবিড়ভাবে খোঁজখবর নিবেন, তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন এবং তারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, তার সমাধানের জন্য চেষ্টা করবেন। শিক্ষকগণ মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীদের মেস বা বাসায় গিয়ে তাদের থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার পরিবেশ পর্যালোচনা করেন মেস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। ছাত্র-ছাত্রীগণ শ্রেণিতে উপস্থিত না থাকলে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন, তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে কোন প্রকার সমস্যা থাকলে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। দীর্ঘ ছুটির সময় শিক্ষকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের মুঠোফোনে এবং কাছাকাছি থাকলে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন। নির্বাচনী পরীক্ষার পরে দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ থাকার সময় দায়িত্তপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের পাঠদান সংক্রান্ত সমস্যা, অবস্থান, অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে মনিটর বিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। 

 

 

লেসন প্ল্যান ও প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত: শিক্ষকগণ ক্লাসে যাওয়ার পূর্বেই যাতে যথোপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন সেজন্য প্রত্যেক শিক্ষক প্রতি ক্লাসের বিপরীতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত করেন। যে মাসে ক্লাস গ্রহণ করবেন সেই মাসের সকল ক্লাসের প্রেজেন্টেশন ফাইল প্রস্তুতপূর্বক তার পূর্ববর্তী মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে স্কুল / কলেজ ইনচার্জদের কাছে জমা দেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনসমূহ পর্যালোচনা পূর্বক ত্রুটি বিচ্যুতি ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ক্লাস শেষে তাদের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনসমূহ শিক্ষার সফটওয়্যার এর আর্কাইভে রেখে দেওয়া হয়। 

কোন শিক্ষক ছুটিতে থাকলে ছুটিতে যাবার আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক তার প্রস্তুতকৃত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন সহ ক্লাস ভিত্তিক সকল লেসন প্ল্যান প্রক্সি শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করবেন। 

এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে শিক্ষকদের মধ্যে পড়াশুনার প্রবণতা, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে বদলি শিক্ষক মূল শিক্ষকের সমান দক্ষতা নিয়ে ক্লাস পরিচালনা করতে সক্ষম হন। 

 

শিক্ষক নিয়োগ এর নতুন ধারার প্রবর্তন: প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া  ইতিপূর্বে  প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। গত এক বছরে বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভালো বেতনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে চাকরিপ্রার্থীগণ দরখাস্ত করেন। অনলাইনে দরখাস্ত গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার ফলে অনেক দূর থেকেও চাকরিপ্রার্থীগণ   আসেন এবং প্রতিযোগিতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশ্নপত্রে কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করা হয়। ফলে প্রার্থীগণ পরীক্ষার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে পারত। প্রশ্নপত্র  প্রণয়ন অতি গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রতিযোগীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং কোন প্রকার দুর্নীতি ও অসদুপায়  অবলম্বন না করে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির প্রত্যাশা করার অনুরোধ করা হয়। ইতিপূর্বে প্রশ্নপত্র প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হত না, কিন্তু আমরা পরীক্ষার পর তাদের প্রশ্নপত্র সাথে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি। উত্তরপত্র মূল্যায়নের  পর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল নোটিশ বোর্ডের  উন্মুক্তভাবে প্রদান হয় এবং এদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী এবং যারা লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় কেবল তাদেরকেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা উন্মুক্ত হলরুমে  সকলের সম্মুখে  সম্পন্ন করা হয়, যেখানে নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্যদের পাশাপাশি সকল বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও উপস্থিত থাকতে পারে। এর ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকে না। নিয়োগের ব্যাপারে শিক্ষকদের উন্নতমান বজায় রাখার জন্য  দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষক পাওয়া না গেলে পরবর্তীতে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রদানে যোগ্য শিক্ষক খোঁজার চেষ্টা করা হয়। লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় মানসম্মত শিক্ষক  না হলে, পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরেও শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।



আমার সংক্ষিপ্ত কার্যকালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের সমস্যাসমূহ দূর করে প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এসব  সফল হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান যারা গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন,  বাস্তবে যারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং প্রথম থেকেই যারা গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে দিবারাত্র এ প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে গিয়েছেন, তাদের  শ্রম ও আন্তরিকতার তুলনায় আমার প্রচেষ্টা খুবই অল্প। তারপরও এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের অংশ হতে পেরেছি, এটাই আমার বড় পাওয়া।


মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর জন্ম রংপুর জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও অপরাধ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। তিনি ৪ এপিবিএন স্কুল ও কলেজ অনলাইন জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা-পৃষ্ঠপোষক, ৪ এপিবিএন, বগুড়ার সাবকে অধিনায়ক। বর্তমানে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ, মিরপুর, ঢাকা এর মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ।