খোলা চিঠি (আব্দুর রাজ্জাক স্যারকে)
।
স্যার,
আজ রৌদ্রালোকিত দিন। প্রকৃতি আত্মভোলা কিশোরীর মত আঁচল উড়িয়ে ছুটছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মুখরিত কোলাহল।সব আগের মতই। কিন্তু একটা নীরব ব্যথা চারপাশ ছেয়ে। আপনার সভাকক্ষটি বন্ধ। খোলা হয়নি। ভিতরে শুনশান আঁধারে শূন্য চেয়ারে একজন বৃহৎ মানব ধীরে ধীরে স্মৃতির মিছিলে মিশে যাচ্ছে। শুধুই অশরীরী! পূর্বাহ্ণের আড়মোড়া ভেঙে ঘাস গালিচায় আচমকা থামেনি ধবলী সুশ্রী গাড়িটি। দরজা খুলে স্মিত হেসে যান নি কোন শ্রেণিকক্ষে।প্রেসার আর পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও বৃহৎ মনে আজ কীসের বেদনা?তখন হয়তো আপনি আড়ালে অশ্রু লুকিয়ে পা বাড়িয়েছেন ভিন্ন পথে,নূতন স্বপ্নে।সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছেন হয়তো -মোটা ফ্রেমের চশমাটা,বই,কলম, লেখার খাতা.. কিন্তু অলস বিকেল, গোধূলি সন্ধ্যা কিংবা রাত্রির গভীরে চায়ের কাপে অজস্র গল্পজাল বুনেছেন,গূঢ় রহস্যে ডুব দিয়েছেন -সেই ক্ষণ, সেই অনুভব নিতে পেরেছেন স্যার?যে কল্যাণ চিন্তা,মহৎ কর্ম আপনাকে ঘিরে রেখেছিল সব সময়,সেই ভাবনাটুকুকে মুঠোবন্দী করতে পেরেছেন স্যার?হয়তো না।কারণ যে টুকু আপনার, যেটুকু বিশ্বজাগানিয়া !তাই অকৃপণ দিয়ে গেলেন।
আপনি সত্যিই যাদুকর। অদৃশ্য শিকল বন্দী মানব শিশুপাখিকে দিলেন উড়বার আকাশ।জড়ত্ব,ভয় যাদেরকে গ্রাস করেছে, তাদের শেখালেন ডেমোস্থেনিস এর মতো কথার উত্তাপ এবং যাদু।রঙ,রুপ,ছবি,স্বপ্ন-ভাবনার তোলপাড় যাদের বুকে প্রচ্ছন্ন,তাদের দিলেন জীবন্ত ক্যানভাস।ভেতরে অসম্ভব লেখক সত্তা ধারণ করেন বলেই হয়তো সৃষ্টিবিমুগ্ধতায় বিনির্মাণের নেশায় স্বপ্নালোক থেকে মুঠো মুঠো আলো কুড়িয়ে এনে নিভৃতে অজস্র আঁধার-প্রদীপ জ্বালিয়ে লুকিয়ে গেলেন নিরুদ্দেশে। কিন্তু সেই প্রজ্বলিত শিখার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে এপিবিএন ছাড়িয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে!জমা হবে ঋণ!প্রজন্মের, মানুষের, সময়ের, পৃথিবীর! হয়তো রবে অপরিশোধ্য। তবু আজকের এই এক টুকরো উৎসর্গীত ক্ষণে অপার আশায় আরো এক হৈমন্তিক অপরাহ্ণে আপনাকে ফিরে পাবার অপেক্ষায়... ।ভীষণ ভালো থাকুন স্যার।
'ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়
তোমারি হউক জয়
তিমির বিদার উদার অভ্যুদয়
তোমারি হউক জয়'
জয় হোক হে প্রিয় বিদায়ী।
শুভার্থী