একাঙ্কিকায় ছাতো চোর মরে পড়ে আছে
 
                                    গতকাল সরকার বাড়িতে একটা ঘটনা ঘটেছে। মাটির দোতলা বাড়ির বড় উঠোনের একপাশে বাথরুম।বাড়ির কর্তা মাঝরাতে প্রকৃতির ডাকে বের হয়। ফিরতে দেরি হওয়ায় গৃহকত্রী মনে করে প্রকৃতির অদম্য আকর্ষণ কী বেরসিক লোকটাকে মায়াজালে বেঁধে ফেললো। বাইরে গিয়ে দেখে চাঁদের আলোয় কুস্তিযুদ্ধ চলছে। খেলোয়াড় দু'জন। গৃহকর্তা বনাম অচেনা। হাতাহাতি থেকে কামড়া-কামড়ি। খেলার উৎস মুরগি চুরি। কচি, বুড়ো,যুবক সব মুরগি যখন বেদখলে তখন গৃহকর্তার অযাচিত আগমন দখলদারের মনে ক্ষোভ জাগায়। মনে করে মুরগির বিদ্রোহের সুর দোতলার বিছানায়ও পৌঁছেছে বলে এ স্বেচ্ছাগমন!।আর তাই গৃহকর্তাকে খেলোয়াড় না হয়েও কুস্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হতে হয়। গৃহকত্রীও রেফারির ভূমিকা পালন করে। অনভিজ্ঞতায় নিয়মভাঙা চিৎকার মাটির পুরো দেওয়াল ডিঙিয়ে ছড়িয়ে যায়।এবার দৃশ্যপটের বদল ।একজন বনাম অসংখ্য। খেলা শেষ হতে হতেই ভোরের আজান দেয়।ফলাফল একজন মৃত, অপরপক্ষ বিজয়ী। সংখ্যাগুরুর কাছে সংখ্যালঘুর পরাজয়।
এবার ২য় দৃশ্য। রঙ্গমঞ্চ বাইরে। খোলা আকাশের নিচে একজন একই দৃশ্যে সারাক্ষণ!খালি গা, একটুকরো ছেঁড়া লুঙ্গিতে ইজ্জত ঢাকা।শরীর ফুলে শিমুল তুলোর পাশবালিশের মতো বালির শয্যায় পড়ে!মুখ সামান্য হা করা। হয়তো জাগতিক অন্তিম কোন কথা আটকে। সংলাপ বিমূর্ত! হাজার দর্শক!নীরব বিমূর্ততাকে তন্ময় হয়ে গিলছে।কী গভীর অবলোকন!নেই ট্র্যাজিক!নেই আফসোস!
একাঙ্কিকায় ছাতো চোর মরে পড়ে আছে। কয়েকটা মুরগির দখলদারিত্বের পরিণাম এই? আর যারা দাঁড়িয়ে আছে বৃহৎ সারিতে রঙ্গমঞ্চের রসিক দর্শক!কত রকম দখলদারিত্বে!কত রকম চুরি! জোচ্চুর, মাটি চোর, ভাষা চোর,শব্দ চোর, অর্থ চোর, বিশ্বাস চোর, সত্য চোর, মানুষ চোর, বিদ্যা চোর, ছ্যাঁচোর,আমানত চোর,সময় চোর, ইতিহাস চোর.. আরও আরও..
পুলিশ ভ্যানে ছাতো চোর চলে লাশকাটা ঘরে! তৃপ্তির ঢেকুর তোলা দর্শককণ্ঠের সমস্বরে প্রতিধ্বনি উঠে "বিচার সঠিক হয়েছে"। তখন স্বাধীন মুরগিগুলো যুগের প্রহসনে খিলখিলিয়ে হাসে...
 

 
                                                                                                                                             
                                                                                                                                            