নীরব প্রতিধ্বনি

Mar 19, 2025 - 15:32
Mar 20, 2025 - 18:27
 0  27
নীরব প্রতিধ্বনি
internate

রাতের প্রথম প্রহরে কোলাহল কমে কিছুটা নির্জনতা ছেয়ে। সিএনজি কিংবা অটোরিকশার শব্দ ছাড়া শহরের রাতে তেমন কোন শব্দ শোনা যায় না।রাতের শরীরে কুয়াশা বিছিয়ে শীতও সুখের ঘুমে। একটা উঠোন বাড়ির ত্রিবৃক্ষ ডাব গাছের শীর্ষে কাক নারীরাও পুরুষি ওমের অপেক্ষায়।সেসব ক্ষণ ছাড়িয়ে হঠাৎ বুকফাটা চিৎকার বড় বেসুরো কানে লাগে। বুকে বিঁধে।মৃদুলা দোতলার খোলা বারান্দা থেকে এক মাকে কাঁদতে দেখে। সন্তান কোন মাতাল গাড়ির ধাক্কায় পথের পাশে পড়ে। মৃত না জীবিত বোঝা যায় না। মার কান্নার সুরটা চিরচেনা। মৃদুলার মনে পড়ে, একদিন মধ্যরাতে ছাগল চুরির অপরাধে এক কিশোরকে যখন বেধড়ক মারা হচ্ছিল তখন এক মায়ের গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার দৃশ্য, সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি বড় করুণ। সেটা এখনও বুকে বাজে। এইতো সেদিন জলে ডুবে মারা যাওয়া শিশুর পাশে মায়ের কান্না বিলাপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিক মনে হয়েছিল তার। সেই কান্না আর এই কান্নার অদ্ভুত মেলবন্ধন! পৃথিবীর সব দুঃখের ভাষা এক। সব কান্নার সুর এক। সে অবচেতনে হারিয়ে যায় মায়ের শরীরের গন্ধে। তার কাছে দূর হতে আসে পৃথিবীর বহু বহু মা। গ্রাম থেকে,শহর থেকে ..চারপাশে মা। যুগের বেদনা নিয়ে দাঁড়ানো আকাশ,পথ, বৃক্ষ,রাত,মাটি,গ্রাম,দেশ সবই মা,মার শীতল বুক। যার জাত নেই, যে সঙ্গাতীত। মৃদুলার মায়ের ছোট্ট শরীরটা কেমন দীর্ঘ হয়। পথের মত, আকাশের মত, নদীর মত।মৃদুলা কাঁদে। অনেক ক্ষণ।সে কান্না নদীতে মেশে,পথে মেশে, মায়ের শরীরে মেশে।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন নিশিপথিক কর্মযজ্ঞের মোহড়ায় মগ্ন থাকলেও পথের পাশে পড়ে থাকা সদ্য দুর্ঘটনার শিকার ওভাবেই পড়ে থাকে। মার বিরতিহীন একই কান্না..পথিকেরাও প্রতিক্রিয়াহীন। নেওয়া হয়না হাসপাতাল কিংবা বাড়ি। শুধু আর্তনাদ বড় হয়ে রাত্রির আকাশে তোলে নীরব প্রতিধ্বনি। কারণ সেই অবলা মা 'কুকুর'...