জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা

জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ বৈচিত্রের সমাহার। জলে-স্থলে সুন্দর আর বিস্ময়ের ছড়াছড়ি এখানে। অসংখ্য অবাক সৃষ্টির অন্যতম একটি অংশ কচুরিপানা। এটি মূলত ভাসমান জলে আগাছা। যার বৈজ্ঞানিক নাম `Eichhomia Crassipe ‘ কচুরিপানা দেখতে সুন্দর। বেগুনি নীল ফুল ফোটে বলে এক সময় আলংকারিক উদ্ভিদ নামেও ডাকা হত। উনিশ শতকে ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশে সৌন্দর্যের কারণে কৃত্রিমভাবে জলে-স্থলে থেকে ছাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এই জলজ উদ্ভিদ। কচুরিপানার জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান অববাহিকায় ব্রাজিল পেরু ও ভেনেজুয়েলায়। ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে একে আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশের জলবায়ু গরম ও আর্দ্র বলে এটি বংশবিস্তারের জন্য খুব উপযুক্ত। কচুরিপানার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করতে পারে। কোনো কারণে নষ্ট হলেও ভাবনার কিছু নেই এটি ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। কিছু কিছু কচুরিপানা রাতারাতি বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রায় দুই সপ্তাহে দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ হলেও এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের লেমনাসি গোত্রের অন্তর্গত । বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একে নানা নামে অভিহিত করা হয় কোন অঞ্চলে জলজ লতা, কোথাও বা ভাসমান কচু আবার কোন অঞ্চলে ক্ষুদিপানা নামেও পরিচিত। বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের মূল আকর্ষণ তার সুন্দর ফুলটি। একটি পুষ্পবৃন্ত থেকে ৮ হতে ১৫ টি আকর্ষণীয় ৬ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয় একটি গাছে।
বাংলাদেশে কচুরিপানা পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলেছে। এ এ জলজ উদ্ভিদের নেতিবাচক দিক একেবারেই অবহেলার নয়। প্রথমত এটি পানিতে অক্সিজেন কমিয়ে মাছের মৃত্যু ঘটায়। আবার কৃষি ক্ষেত্রে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে উৎপাদন হ্রাস করে। কিন্তু এর বিপরীতে এর ইতিবাচক দিক বেশ লাভজনকও বটে। কচুরিপানা প্রথমত পশুর খাবার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এ থেকে জৈব সার,কারুশিল্প, বায়োগ্যাস ও বর্জ্য শোধনে ব্যাপক ব্যবহার হয়। কচুরিপানায় পাওয়া যায় প্রায় ৫০-৬০% কার্বোহাইড্রেট, ১০% প্রোটিন, ২০-২৫% ফাইবার এবং ৮০ থেকে ৯৫ পার্সেন্ট পানি। ফলে কচুরিপানা পশু খাদ্য বা সার হিসেবে অধিক ব্যবহৃত হয়।
এ সকল উপকরণ ছাড়াও কচুরিপানার মধ্যে পাওয়া যায় এন্টি ইনফ্রেমেটরি, এন্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এ কারণে কিছু কিছু সাধারণ রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কচুরিপানার রস গলা ব্যথা এবং ফোলার উপশম হয়। অন্যদিকে এই জলজ উদ্ভিদ পেটের স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী। ডায়রিয়া বমি বমি ভাব এবং পেট ফাঁপা নিয়ন্ত্রণের জন্য এর ব্যাপক বেশ পরিচিত রয়েছে। এ ফুলের গর্ভদ্ন ফেলে দিয়ে পুরো অংশটি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এর চাটনিও বেশ সুস্বাদু এবং তৃপ্তিকর। কচুরিপানা বাংলাদেশের নিজস্ব কোন উদ্ভিদ নয়,দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বহিরাগত আগাছা। ব্রিটিশদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর প্রবেশ। আগামী দিনে কচুরিপানাকে আগাছা হিসেবে না ভেবে বরং একটি সম্ভাব্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।