বুককমলের রক্তচিহ্ণ

Sep 3, 2025 - 16:19
Sep 4, 2025 - 11:04
 0  8
বুককমলের রক্তচিহ্ণ

বুককমলের রক্তচিহ্ন

লিপু পাগলা বিএ পাশ করেছে, এমএ পাশ করেছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যা গিলে খেয়েছে। কোচিংয়ের নোট, বাজারের গাইড, শিক্ষকের বক্তব্য,বড়ো বড়ো বই সব.. সব !  লিপু পাগলা মাথায় নিয়ে ঘোরে এক পৃথিবী বিদ্যা। তবু লিপু পাগলা ক্ষুধার্ত। পেট ভরা ভাত চাই, বেঁচে থাকার টাকা চাই, মনমানসীর সুখের নীড় চাই, মা-বাবার পরম নির্ভরতার আশ্বাস চাই। সে ভাবে তার জন্মপাপ। যারা তার অশুভ জন্মের বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিল, সেই বাবা-মার প্রতি তার ঘৃণা জন্মে। প্রবল ঘৃণা। সে হীনম্মন্যতায় ভোগে। আশেপাশের লোকজন মনে করে তার মাথা খারাপ হয়েছে । একদিন সে ধারালো ছুরি নিয়ে সারারাত বসে থাকে বৃদ্ধ  বাবা-মার ঘরের দরজায়। বলে, ‘বের হলে কেটে ফেলবো’। হঠাৎ অদৃশ্য ভোরের কোন বিরহিনী পাখির কান্না তাকে ছুঁয়ে যায়। লিপু পাগলারও বুকভরা কান্না সমুদ্রের মতো ফেনিয়ে উঠে। ফুঁপিয়ে ছুটে যায়। কোথায় রাখবে এত জল! পুকুরের খোঁজে যায় । বাড়ির পাশে কিংবা তার শহরে কোন পুকুর নেই। সে ভাবে, তার কান্নাজলে আবার কোনো পতিব্রতা বেহুলা পতিদেবের অমরত্বের স্বপ্নে ইতিহাস হবে! তাই নদীর খোঁজে গিয়ে দেখে, অকালমৃতা অভিমানী করতোয়া ! লিপু পাগলার মনে পড়ে, তার শহরের পুরনো রেললাইনটি তৃষ্ণার্ত, তপ্ত। সে ঢেলে দেয় এক সমুদ্র কান্নাজল ! তার আরও মনে হয়, রেল লাইনের দু'পাশে ফুলগাছ থাকা দরকার। রক্তলাল ফুল! ছুটন্ত ট্রেন ফুটন্ত ফুলের শুভেচ্ছা ও সুগন্ধি নিয়ে যাবে ভিন্ন শহরে। পৌঁছে দিবে সাম্যের বার্তা!

লিপু পাগলার বিশ্বাস বিদ্যার ফুল সে কোথাও ফোটাতে পারে নি। চাকরির খোঁজে পদস্থদের দ্বারে দ্বারে অকারণ ঘুরেছে । কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা বুকে চেপে,সে নিজেই আজ হাজারো রক্তগোলাপের স্বপ্নে ঢেলে দেয় এক বুক রক্ত!

তখন চলন্ত ট্রেনের ভারি চক্রগুলো দ্রুত রেখে যায় পথের দু'পাশে রক্তচিহ্ন !!